skip
Monday , June 5 2023

যেকোনো পরীক্ষায় ভালো ফল পাওয়ার জন্য কিভাবে পড়াশোনা করতে হয় ?

How to study to get good results in any exam ?

ভালো রেজাল্ট করাটা খুবই সহজ।

করতে চাইলেই করা যায়। এজন্যে জিনিয়াস হওয়ার প্রয়োজন নেই। অসাধারণ মেধাবী বা শ্রুতিধর হওয়ার দরকার নেই। গণ্ডায় গণ্ডায় প্রাইভেট টিচার বা ভালো স্কুল কিংবা ধনী বাবা-মায়ের সন্তান হওয়াও ভালো রেজাল্টের শর্ত নয়। ভালো রেজাল্টের জন্যে প্রয়োজন মাত্র দুটি জিনিস। এক- আত্মবিশ্বাস, দুই- অদম্য ইচ্ছা। বিশ্বাস হচ্ছে না? একটা উদাহরণ দেয়া যাক।

ড. বি আর আম্বেদকর। জন্ম ১৯ শতকের শেষভাগে ব্রিটিশ ভারতের মধ্যপ্রদেশে এক দলিত পরিবারের ১৪ নম্বর সন্তান হিসেবে। অস্পৃশ্য হওয়ায় স্কুলে তাকে বসতে হতো ক্লাসের বাইরে বারান্দায়। এমনকি তেষ্টা পেলে স্কুলের উচ্চবর্ণের দপ্তরীটি ছোঁয়া বাঁচিয়ে ওপর থেকে পানি ঢেলে না দেয়া পর্যন্ত পানি খাওয়ার অনুমতিটুকুও ছিলো না তার। এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিতে ১৯ মাইল দূরের পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু মাঝপথে গাড়োয়ান তাকে গরুর গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছিলো অস্পৃশ্য হয়ে গাড়িতে ওঠার অপরাধে।

এতকিছুর পরও হার মানেন নি। দারিদ্র্য আর রোগ-শোকের বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে যাওয়া মাত্র ৫ ভাইবোনের ১ জন ছিলেন তিনি এবং একমাত্র তিনিই পেরোন হাইস্কুলের গণ্ডি। ভারতের ইতিহাসে তিনিই প্রথম দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য যিনি কলেজে ভর্তি হন। পরবর্তীতে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ও লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স থেকে আইন ও অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রিসহ অর্জন করেন কয়েকটি ডক্টরেট।

দেশে ফিরে একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবীর পাশাপাশি তিনি হয়ে ওঠেন সমকালীন রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে জীবনকে উৎসর্গ করেন। স্বাধীন ভারতের সংবিধান প্রণয়নের গুরুদায়িত্ব পালন করেন উদার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যা অর্জন করে সবার সপ্রশংস সমর্থন।

বাবা আম্বেদকর নামে ভারতবর্ষে তিনি হয়ে ওঠেন সর্বজনশ্রদ্ধেয়। প্রতিবছর তার জন্ম, মৃত্যুদিবসে হাজারো মানুষ সমবেত হয় তার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবার উদ্দেশ্যে।

আপনার অবস্থা নিশ্চয়ই বাবা আম্বেদকরের চেয়ে খারাপ নয়। তাহলে আপনি কেন পারবেন না?

আপনি যদি নিজেকে মূল্যহীন মনে করে থাকেন, ভাবেন আহা অমুকের মতো যদি হতে পারতাম! তাহলে এর চেয়ে বড় ভ্রান্তি কিছুই হতে পারে না। কারণ আপনার মনোদৈহিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী ব্রেন হচ্ছে যেকোনো কম্পিউটারের চেয়েও কমপক্ষে দশ লক্ষ গুণ বেশি শক্তিশালী। কম্পিউটারের দামের অনুপাতে আপনার ব্রেনের মূল্য কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা। আর আপনি জানেন যে, সভ্যতার সবকিছুর পেছনেই রয়েছে এই ব্রেনের ক্ষমতার সৃজনশীল প্রয়োগ। আর আপনি বিশ্বের ৬ শত কোটি মানুষের মধ্যে এক অনন্য সৃষ্টি। আপনার মতো হুবহু একইরকম দ্বিতীয় কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনার ব্রেনও তাই অনন্য।

তাই ক্লাসে ১ম হওয়া থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি যুক্তিসঙ্গত চাওয়াকে আপনি পাওয়ায় রূপান্তরিত করতে পারবেন যদি আপনি বিশ্বাস করেন ।

মেধাবী বলে কোনো কিছু হয় ?

তার আগে জেনে নিন আমরা ভুলে যাই কেন। ভুলে যাওয়ার কারণের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো আমাদের নেতিবাচক প্রোগ্রামিং। আমরা মনে করি, আমরা মনে রাখতে পারবো না। দ্বিতীয়ত, আমরা মন দিয়ে জিনিসটি শিখি না এবং বার বার ঝালাই করি না। পরীক্ষায় দেখা গেছে, তথ্যগুলো পরবর্তীতে ব্যবহার না করলে যেকোনো পড়ার ১ দিনের মাথায়ই এর ৭৫% ভুলে যায় মানুষ। তৃতীয়ত, বিক্ষিপ্ত এবং অপ্রাসঙ্গিকভাবে শিখলে এবং টেনশন ও দুশ্চিন্তায় মন আচ্ছন্ন থাকলে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বেশি হয়। আর আপনার ভুলে যাওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে যেভাবে আপনি শিখেছেন ঠিক সেভাবে মনে করতে না পারা। পরীক্ষার সময় প্রশ্ন একটু ভিন্নভাবে এলে আমাদের মনে করতে যে অসুবিধা হয় তা এ কারণেই।

অথচ আমাদের সবারই মনে রাখার ক্ষমতা সমান। পার্থক্যটা হয় স্মৃতিকে চর্চা না করার ফলে। ব্রেনের এই মেমোরি ব্যাংকের কিন্তু কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। প্রতি সেকেন্ডে হাজার খানেক নতুন তথ্য গ্রহণের ক্ষমতা আছে এবং যত নতুন তথ্যই দেই না কেন সে কিন্তু ঠিকই এর জন্যে জায়গা করে দিচ্ছে।

এবার তাহলে জেনে নিন মনে রাখার ক্ষমতাকে আপনি কীভাবে বাড়াতে পারেন।

যা আপনি মনে রাখতে চান তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন বা পড়ুন। একইসময় যদি একটা বিষয়েই মনোযোগ দেন তাহলে এটা সহজ হবে।

আর মনোযোগহীনতার একটা বড় কারণ হলো আগ্রহের অভাব। এজন্যে মনোযোগ অধ্যায়ে দেয়া আগ্রহের টিপসগুলো পড়ুন।

যে তথ্যগুলো মনে রাখতে চান সেগুলোকে নির্দিষ্ট করুন এবং শুধু তাতেই মনোযোগ দিন। যেমন, বইয়ের যে তথ্যগুলো আপনি নতুন দেখছেন বা কঠিন মনে হচ্ছে সেগুলোই হবে আপনার মনোযোগের বিষয়।

একটি বিষয়কে আপনি যত ভিন্ন দৃষ্টিকোণ এবং ব্যাখ্যা থেকে বুঝবেন তত এটি আপনার মনে রাখা সহজ হবে। পুরনো জানা তথ্যের সঙ্গে মিল-অমিল চিন্তা করে ভাববেন, তত আপনার মনে থাকবে। যেমন, আপনি জানলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনকের নাম হিপোক্রেটিস। প্রথমেই আপনার মনে হলো হিপোক্রেট একটি ইংরেজি শব্দ যার অর্থ হলো ভণ্ড বা প্রতারক। কিন্তু আপনার নতুন শেখা এই নামের সঙ্গে এ অর্থের কোনো মিল নেই। বরং উল্টোটাই প্রযোজ্য। কারণ এখনও চিকিৎসকরা পাশ করার পর যে শপথ নেন তাকে বলা হয় ‘হিপোক্রেটিক ওথ’ যার বক্তব্য হলো একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি রোগীকে সাধ্যমতো নিরাময় করার চেষ্টা করবেন, রোগীর গোপন কথা প্রকাশ করবেন না এবং সৎভাবে জীবন যাপন করবেন।

যা মনে রাখতে চান, তাকে একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠামোয় রূপান্তরিত করুন। আংশিক না করে বিষয়টি পুরোপুরি শিখতে বা বুঝতে চেষ্টা করুন।

মনে রাখার জন্যে প্রথমবার পড়ার ২/১ দিনের মধ্যেই পড়াকে রিভাইজ করুন। কোয়ান্টা রিডিং পদ্ধতিতে সুযোগ পেলেই চোখ বুলিয়ে নিন। এছাড়া ক্লাস শেষে নিয়মিত ক্লাসনোটে চোখ বুলান।

মনে রাখার ক্ষেত্রে ছবির ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই কোনো জটিল বা ব্যাপক বিষয়কে ছবি, চার্ট বা ডায়াগ্রামে সাজিয়ে নিন।

এছাড়া তৈরি করতে পারেন নানা ধরনের মনে রাখার ছন্দ। যেমন, মুঘল সাম্রাজ্যের পরম্পরা বোঝাতে ‘বাবার হইল একবার জ্বর, সারিল ঔষধে’ ছড়াটি আওড়ালেই বাবর, হুমায়ূন, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, আওরঙ্গজেব প্রমুখ মুঘল বাদশাহদের নাম একের পর এক বলে দেয়া যায়।

১. পড়তে বসার আগে একটু চিন্তা করুন- কী পড়বেন, কেন পড়বেন, কতক্ষণ ধরে পড়বেন। প্রত্যেকবার পড়ার আগে কিছু টার্গেট ঠিক করে নিন। যেমন, এত পৃষ্ঠা বা এতগুলো অনুশীলনী।

২. বিষয়ের বৈচিত্র্য রাখুন। নিত্য নতুন পড়ার কৌশল চিন্তা করুন।

৩. এনার্জি লেভেলের সঙ্গে আগ্রহের একটা সম্পর্ক আছে। এনার্জি যত বেশি মনোযোগ নিবদ্ধ করার ক্ষমতা তত বেশি হয়। আর অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর দিনের প্রথমভাগেই এনার্জি বেশি থাকে। তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যে পড়াটা দিনে ১ ঘন্টায় পড়তে পারছে সেই একই পড়া পড়তে রাতে দেড় ঘণ্টা লাগছে। তাই কঠিন, বিরক্তিকর ও একঘেয়ে বিষয়গুলো সকালের দিকেই পড়ুন। পছন্দের বিষয়গুলো পড়ুন পরের দিকে। তবে যদি উল্টোটা হয়, অর্থাৎ রাতে পড়তে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাহলে সেভাবেই সাজান আপনার রুটিন।

৪. একটানা না পড়ে বিরতি দিয়ে পড়বেন। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা ২৫ মিনিটের বেশি একজন মানুষ মনোযোগ দিতে পারে না। তাই একটানা মনোযোগের জন্যে মনের ওপর বল প্রয়োগ না করে প্রতি ৫০ মিনিট পড়ার পর ৫ মিনিটের একটা ছোট্ট বিরতি নিতে পারেন। কিন্তু এ বিরতির সময় টিভি, মোবাইল বা কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত হবেন না যা হয়তো ৫ মিনিটের নামে দুঘণ্টা নিয়ে নিতে পারে।

৫. মনোযোগের জন্যে আপনি কোন ভঙ্গিতে বসছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। সোজা হয়ে আরামে বসুন। অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া বন্ধ করুন। চেয়ারে এমনভাবে বসুন যাতে পা মেঝেতে লেগে থাকে। টেবিলের দিকে একটু ঝুঁকে বসুন। আপনার চোখ থেকে টেবিলের দূরত্ব অন্তত দু ফুট হওয়া উচিৎ।

৬. পড়তে পড়তে মন যখন উদ্দেশ্যহীনতায় ভেসে বেড়াচ্ছে জোর করে তখন বইয়ের দিকে তাকিয়ে না থেকে দাঁড়িয়ে পড়ুন। তবে রুম ছেড়ে যাবেন না। কয়েকবার এ অভ্যাস করলেই দেখবেন আর অন্যমনস্ক হচ্ছেন না।

৭. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসুন এবং পড়তে বসার আগে কোনো অসমাপ্ত কাজে হাত দেবেন না বা সেটার কথা মনে এলেও পাত্তা দেবেন না। চিন্তাগুলোকে বরং একটা কাগজে লিখে ফেলুন।

৮. টার্গেট মতো পড়া ঠিকঠাক করতে পারলে নিজেকে পুরস্কৃত করুন, তা যত ছোটই হোক।

লেখাপড়ার পরিবেশ কেমন হতে হবে ?

১. পড়ার টেবিলটাকে রাখুন দেয়ালমুখো। ছবি, শো-পিস ইত্যাদি সবরকম জিনিস যা মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করতে পারে সেগুলোকে চোখের সামনে থেকে সরিয়ে রাখুন।

২. চেষ্টা করুন একই জায়গায় সবসময় পড়ার জন্যে। আর পড়ার টেবিলটাকে অন্য আর কোনো কাজে ব্যবহার করবেন না। একইভাবে বিছানায় শুয়ে বা বসে পড়ার অভ্যাস করবেন না।

৩. মোবাইল বন্ধ করে রাখুন। সাইলেন্স বা ভাইব্রেশনে রাখলে একবারে পড়া শেষ করে মোবাইল খুলুন।

৪. টিভি’র সামনে বসবেন না। একবারে শব্দহীন পরিবেশ যদি অস্বস্তিকর হয়, তাহলে দ্রুতলয়ের কোনো মিউজিক খুব কম ভলিউমে দিয়ে রাখতে পারেন। তবে সেটাও ডিস্টার্বিং মনে হলে বন্ধ করে দিন।

৫. পড়ার জায়গায় পর্যাপ্ত আলো যেন থাকে। আলো পড়ার মনোযোগ বাড়ায়।

৬. পড়ার কাজে যে জিনিসগুলো লাগবে তার সবগুলোই নিয়ে বসুন। যাতে বারবার উঠতে গিয়ে মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করতে না হয়।

৭. বন্ধু রুমমেট বা বাসার কেউ আপনার মনোযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে কিনা খেয়াল করুন। তাকে এড়াবার জন্যে কৌশল অবলম্বন করুন।

৮. পড়ার জন্যে লাইব্রেরি, সেমিনার রুম, রিডিং হল ইত্যাদি যেখানে আরো অনেকেই পড়ছে এবং পুরো পরিবেশটাই পড়ার জন্যে অনুকূল সেগুলোকে বেছে নিতে পারেন। আপনি মনোযোগী হতে পারবেন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
Publish Your Own Post Now
Write Post !