skip
Thursday , June 1 2023

রুবিক্স কিউব মেলানোর সহজ উপায় কী ?

What is the easiest way to match Rubik’s Cube ?

রুবিক কিউব সল্ভ করার কোন সহজ পদ্ধতি নেই। দ্রুত রুবিক কিউব সল্ভ করেন যাঁরা (স্পীডসল্ভার) তাঁরা বস্তুত কিছু চেনা ফরমুলা মুখস্ত রাখেন, আর সেগুলি ব্যবহার করে কিউবের এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে নিয়ে যান।

এই ফরমূলা মুখস্ত করে আর বারবার দেখে এবং না দেখে কিউবের উপরে প্রয়োগ করে একে “হাতস্থ” করে ফেলতে হয়। তারপরে কিউবের চেহারা দেখে পর পর ঠিক ফরমুলা প্রয়োগ করে ফেললে কিউব সল্ভড হয়। এই ফরমুলা পড়তে চাইলে এই চিত্রটি দেখুন –

কিউবের একেকটি পিঠকে একেকটি ইংরিজি অক্ষর দিয়ে বোঝানো হয় (Left-Right, Front-Back, আর Up-Down এর আদ্যক্ষর), আর ঘড়ির কাঁটার দিকে সিকি মোচড় (৯০ ডিগ্রী)কে একচাল ধরা হয়। উলটোবাগে ঘোরা বোঝাতে চাইলে F এর জায়গায় F’ ব্যবহার করা হয়।

অর্থাৎ RUR’U’ এর অর্থ ডাইনের পিঠকে এক মোচড়, উপরের পিঠে এক মোচড়, সামনের পিঠে উলটো মোচড়, আর সবশেষে উপরের পিঠে উল্টোবাগে এক মোচড়।

তবে আপনি যদি সত্যিই সল্ভ করা শিখতে চান, স্পিডসল্ভিং নয় – ভেবে চিনতে আস্তে ধীরে ধাঁধা মেলানোর মত করে সল্ভিং – তবে এর থেকে আলাদা একটা উপায় রয়েছে। প্রচুর সময় হাতে থাকলে, আর সমাধান করার আনন্দ পেতে চাইলে তবেই বাকিটা পড়ুন নইলে এইখানে গিয়ে

ফরমুলা প্রিন্ট করে ফেলুন, আর নামতা পড়ার মত মুখস্ত করুন।

যদি মুখস্ত না করে (অথবা মুখস্ত করে নিয়ে তার পরেও), ব্যাপারটা শিখতে চান, তবে এগিয়ে চলুন।

সবার প্রথমে কিউবটিকে চিনে নিন। এটি একটি ৩x৩x৩ ঘনক, জ্যামিতিকভাবে এতে সাতাশটি ক্ষুদ্রঘনক রয়েছে, এদের মধ্যে একটি এক্কেবারে কিউবের কেন্দ্রে, যাকে দেখা যায় না। আর ছয়টি একরঙা ক্ষুদ্রঘনক সেই কেন্দ্রের সাথে জোড়া (সেন্টারপিস))। কিউবের প্রত্যেক মোচড় এগুলির একটিকে কেন্দ্র করে ঘোরে, এইগুলি জায়গা পরিবর্তন করে না। ছয়ে একে মিলে হল সাত, বাকি কুড়িটি ক্ষুদ্রঘনক স্থান পরিবর্তন করতে পারে।

এই শুধু নয়, এই কুড়িটির মধ্যে আটটি তিনরঙা ক্ষুদ্রঘনক, যেগুলি কোনাতে থাকে (কর্ণারপিস বা কর্ণার)। আর বারোটি দুইরঙা ক্ষুদ্রঘনক, যেগুলি দুটি কোনার মাঝে থাকে (এজ বা এজপিস)।

কখনও কোন অবস্থাতেই সেন্টার পিস নড়ে না, আর কর্ণার আর এজ জায়গা বদল করতে পারে না। তার মানে, কর্ণারগুলি একে অপরের সাথে জায়গা বদলায়, এজ গুলিও তাই।

পরিষ্কার? বেশ এবারে পরের পাঠ।

রুবিক কিউব ধরে যদি কয়েকটি মোচড় দিই, আর তারপরে সেগুলি যদি ফের উল্টোপানে মোচড় দিই, কিউব যেখানে ছিল সেখানে ফিরে আসবে। অর্থাৎ যদি ধরে নিই যে ক খ গ কয়েকটি মোচড়ের পরম্পরা (সিরিজ অফ টার্ন্স), আর ক ‘ খ ‘ গ ‘ তাদের প্রতিরূপ বা ইনভার্স, তাহলে ক খ গ গ ‘ খ ‘ ক ‘ এই মোচড়ে কিউবটি আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।

সুতরাং (ক খ গ ) এই মোচড় পরম্পরার প্রতিরূপ হচ্ছে (গ ‘ খ ‘ ক ‘)।

বেশ? এবারে কিউব হাতে নিয়ে ক খ ক ‘ মোচড় দিয়ে দেখুন কি হয়। দেখবেন প্রায় পুরো কিউবই এক রয়েছে, কিন্তু সামান্য কিছু ক্ষুদ্রঘনক জায়গা পরিবর্তন করেছে।

ক খ ক ‘ খ’ দিয়েও দেখুন। আরও কম পরিবর্তন। উল্লেখ্য, পূর্বে বর্ণিত RU’R’U এরকমই একটা চাল।

আর হ্যাঁ, ভালো কথা। দুটি পিঠ যদি একে অপরের উলটো না হয়, তাহলে যে কোনো দুটি পিঠ A আর B নিয়ে যদি AB’A’B চালটিকে ধরা যায়, একে বলে একটা ল্যাম্বডা অথবা জেনেরেটর। এই চালটি ছয়বার চাললে কিউব যেখানে ছিল সেখানে ফিরে আসে। এই চালটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ, যে কিউবাররা এই RUR’U’ চালকে বলে সেক্সি মুভ
। এই ল্যাম্বডারই আরেক ভেরিয়েন্ট হচ্ছে স্লেজহ্যামার ও তার প্রতিরূপ হেজস্ল্যামার

এই হল আপনার থিওরি। প্রথমটি কনজুগেট, পরেরটি কমিউটেটর। প্রায় সম্পূর্ণ কিউব অপরিবর্তিত রেখে সামান্য কিছু হেরফের করতে চাইলে, এই দুটিই আপনার হাতিয়ার।

খালি আরেকটা অতিরিক্ত তথ্য দিয়ে দিই, সম্ভবত না বললেও চলে, আগের উদাহরনগুলিতে ক খ ইত্যাদি কিউবের একপাশের চার আনা মোচড় (কোয়ার্টার টার্ন অফ আ ফেস) ধরে বুঝতে সুবিধে হয় বটে, তবে এগুলি জটিল মোচড়ের সমন্বয় হলেও অসুবিধে নেই। খালি মোচড় পরম্পরার ইনভার্স খেয়াল রাখবেন।

এইবারে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, শুধু এই ল্যাম্বডা এবং কিউবের এদিক ওদিক করা দিয়েই সমাধান করা সম্ভব, ল্যাম্বডার নানান কম্বিনেশন, এবং নানান ল্যাম্বডার কম্বিনেশান দিয়ে।

ব্যস, নিত্যনতুন চাল আবিষ্কার করুন, দুয়েক হপ্তা সময় দিলেই সমাধান হয়ে যাবে।

আরো একটি পদ্ধতি দেখে নিনঃ

আমরা অনেকেই হয়তো এই বিশেষ 3D Puzzle নিয়ে নাড়াচাড়া করেছি। আবার অনেকে হয়তো অন্য কারও হাতে দেখেছি। সুন্দর দেখতে এই বিশেষ বস্তুটির নাম হল রুবিক’স কিউব। ১৯৭৪ সালে হাঙ্গেরিয়ান স্থপতি প্রফেসর Ernő Rubik এটি উদ্ভাবন করেন। তখন এর নাম দেয়া হয় ম্যাজিক কিউব (Magic Cube)। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে এটির নাম পরিবর্তন করা হয়। আবিষ্কারকের নামানুসারে রাখা হয়- রুবিক’স কিউব (Rubik’s Cube)। তবে এখনও ম্যাজিক কিউব নামটা প্রচলিত।
রুবিক’স কিউবের ইতিহাস জানা তো হল। এবার কিছুটা মজা করা যাক। যাদের কাছে রুবিক’স কিউব আছে, তাদের কাছে একটা প্রশ্ন। আপনি কি কখনও কিউবটি মেলাতে পেরেছেন? (শেখা ছাড়া)। যাদের কাছে কিউব নেই, তারা যদি ভেবে থাকেন এ আর এমন কি কঠিন কাজ, ঘুরাতে ঘুরাতে কিউব একসময় অবশ্যই মিলে যাবে! যারা এরকম চিন্তা করছেন, তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারবেন এটা আদৌ সম্ভব কিনা । রুবিক’স কিউব আসলে ২৬টি ক্ষুদ্রাকার কিউবের সমন্বয়ে তৈরি, যাকে বলে কিউবিস বা কিউবলেটস (cubies or cubelets)। এদের মধ্যে রয়েছে ৬ টি সেন্টার কিউবি বা সেন্টার পিস (center piece), ১২টি এজ পিস (edge piece) এবং ৮টি কর্নার পিস (corner piece)। কেবলমাত্র ৬ টি সেন্টার পিস ছাড়া বাকি সবাই নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। তবে এখানেও কিছু ব্যাপার আছে। এজ পিসগুলো কখনও কর্নারে বা কর্নার পিসগুলো কখনও মাঝখানে চলে আসতে পারে না।
এবার আসি, বিখ্যাত এই কিউবটির বিন্যাস প্রসঙ্গে। রুবিক’স কিউবের ৮টি কর্নার পিস ৮! উপায়ে বিন্যস্ত হতে পারে। আবার প্রতিটি কর্নার পিসে ৩টি রঙ থাকে, অর্থাৎ প্রতিটি কর্নার পিস কোন নির্দিষ্ট অবস্থানেই ৩টি পৃথক বিন্যাস তৈরি করতে পারে। তারমানে রঙের ভিন্নতার জন্য এর বিন্যাস সংখ্যা হবে ৩^৮। অর্থাৎ, শুধু কর্নার পিসগুলোই ৮!x৩^৮ উপায়ে বিন্যাস্ত হতে পারে। একইভাবে, এজ পিসগুলো বিন্যস্ত হতে পারে ১২!x২^১২ উপায়ে। সেন্টার পিসগুলো বিবেচনার বাইরে, কারণ তাদের অবস্থান অপরিবর্তনীয়। তাহলে আমরা যেটা পাচ্ছি তা হল, একটি রুবিক’স কিউব সর্বমোট ৮!x৩^৮x১২!x২^১২ = ৫১৯,০২৪,০৩৯,২৯৩,৮৭৮,২৭২,০০০ (প্রায় ৫১৯ কুইন্টিলিয়ন) ভাবে বিন্যস্ত হতে পারে! [১ কুইন্টিলিয়ন = ১০^১৮] দাঁড়ান, হিসাব এখনও বাকি আছে। কেননা রুবিক’স কিউব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কখনোই এর সম্ভাব্য সকল বিন্যাস পাওয়া সম্ভব না। এর কারণগুলো হল-
১। বৈধ উপায়ে কখনোই একটি কিউবকে ঘুরিয়ে তার এজ পিসকে উল্টিয়ে ফেলা সম্ভব না। তারমানে এক্ষেত্রে এজ পিসগুলোর মোট বিন্যাসের ১/২ অংশ বিন্যাস সঠিক হবে।
২। কিউব ঘুরিয়ে কখনও একটি কর্নার পিসকে উল্টিয়ে ফেলা যায় না। ফলে কর্নার পিসগুলোর মোট বিন্যাসের ১/৩ অংশ বিন্যাস সঠিক হবে।
৩। যেকোনো দুটি কিউবি বা পিসের পারস্পরিক অবস্থান পরিবর্তন করা যায় না। এর মানে হল কোন একটি নির্দিষ্ট রঙের এজ পিসকে অন্য আরেকটি রঙের এজ পিস দ্বারা প্রতিস্থাপন করা যায় না। একইভাবে কোন একটি নির্দিষ্ট অবস্থানের কর্নার পিসকে অন্য আরেকটি কর্নারে বসানো যায় না। এক্ষেত্রে ১/২ অংশ হবে কিউবির বিন্যাসের সঠিক parity.
(উপরের এই কাজগুলো কখনোই বৈধ উপায়ে করা যায় না। তবে আপনি যদি পিসগুলোকে খুলে এই নিষিদ্ধ কাজগুলো করেন, তাহলে অবশ্য অন্য কথা। সেক্ষেত্রে আপনাদের একটা কথা বলে রাখি, এই অবস্থায় আপনি জীবনেও কিউবটি মেলাতে পারবেন না।) তো এখন আমরা পাচ্ছি-
(৮!x৩^৮x১২!x২^১২)/২x৩x২ = ৪৩,২৫২,০০৩,২৭৪,৪৮৯,৮৫৬,০০০ (প্রায় ৪৩ কুইন্টিলিয়ন)
এই ৪৩ কুইন্টিলিয়ন বিন্যাসের মধ্যে শুধুমাত্র একটি বিন্যাসেই কিউবটি মেলানো অবস্থায় থাকে। সুতরাং ভাগ্যের জোরে রুবিক’স কিউব সমাধান করার সম্ভাব্যতা হল-
(১ )/(৪৩,২৫২,০০৩,২৭৪,৪৮৯,৮৫৬,০০০) = ০.০০০০০০০০০০০০০০০০০০০২৩১২
এটি এতই ক্ষুদ্র সংখ্যা যে, এটাকে শূন্য হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তারমানে ভাগ্যের জোরে রুবিক’স কিউব সমাধান করার সম্ভাব্যতা ০, অর্থাৎ সম্পূর্ণ অসম্ভব। তাই আপনি যদি চিন্তা করেন, ঘুরাতে ঘুরাতে এক সময় কিউবটি মিলে যাবে- সেরকম ঘটনা কখনোই হবে না।
আপনাদের আরও একটা মজার তথ্য দেই। প্রতি সেকেন্ডে একবার ঘুরিয়ে রুবিক’স কিউবের সমস্ত সম্ভাব্য বিন্যাস তৈরি করতে ১৪০০ ট্রিলিয়ন বছর সময় লেগে যাবে যেখানে এই মহাবিশ্বের বয়সই মাত্র ১৪ বিলিয়ন বছর!
মূলত রুবিক’স কিউবের আবিষ্কার হয়েছিল গণিতের হাত ধরে। গণিতের অনেক বিষয় ব্যাখ্যা করতেও তাই রুবিক’স কিউব ব্যবহার করা হয়। বিন্যাস, Parity, গ্রুপ থিওরি, Lagrange’s theorem, Cayley Graphs, সুপারফ্লিপ- এরকম আরও অনেক কিছুর ব্যাখ্যাতেই এটি ব্যবহার করা হয়। আবার রুবিক’স কিউব সমাধানের কৌশলও বের হয়েছে গণিতের মাধ্যমেই।
রুবিক’স কিউব সমাধানের অনেক পদ্ধতি প্রচলিত আছে। এদের মধ্যে Layer by Layer method, Corner First method, Fridrich method (CFOP), Roux method, Petrus method, Waterman method, Heise method বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রুবিক’স কিউব বিশ্বে একটি জনপ্রিয় puzzle game হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে রুবিক’স কিউবের বিশ্বরেকর্ডটি (single) নেদারল্যান্ডের Mats Valk-এর দখলে। তিনি মাত্র ৫.৫৫ সেকেন্ডে মিলিয়ে রেকর্ডটি করেন। এছাড়া রুবিক’স কিউবের (average) বিশ্বরেকর্ড করেছেন অস্ট্রেলিয়ার Feliks Zemdegs (৬.৫৪ সেকেন্ড)। আমাদের দেশে এখনও আন্তর্জাতিক মানের কিউবার তৈরি হয় নি। তবে আমরা আশাবাদী যে, আগামী দুই বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে কয়েকজন আন্তর্জাতিক মানের কিউবার বের হবে।
বিশ্বে খুব কম মানুষই রুবিক’স কিউব মেলাতে পারে। আপনিও চেষ্টা করুন সেই অল্প সংখ্যক মানুষদের মধ্যে থাকার। আর আপনারা যারা রুবিক’স কিউব মেলানোকে ‘বাচ্চাদের খেলা’ বলে থাকেন, তারা একবার মেলানোর চেষ্টা করেই দেখুন না! ব্যাপক মজা পাবেন!!
সূত্র:
১। Mathematics of the Rubik’s Cube by W. D. Joyner
২। http://en.wikipedia.org/wiki/Rubik’s_Cube 

রুবিক্স কিউব মেলানোর সূত্রঃ

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
Publish Your Own Post Now
Write Post !