প্রস্তুতি যদি গোছানো হয় ,স্টাডি পরিকল্পনা যদি ঠিক থাকে তাহলে হাজার হাজার প্রার্থীর মধ্যেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজেকে এগিয়ে রাখা সম্ভব।সময় আপনার কম থাকলে ও যদি তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেন তাহলে আপনার দ্বারা ও প্রাথমিক শিক্ষক হওয়া সম্ভব।তবে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য পরিশ্রমের পাশাপাশি কিছু টেকনিক অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।শুধু পরিশ্রম করলেই যদি সবকিছু হত তাহলে গাধাকেই বলা হত বনের রাজা।কাজেই পরিশ্রমের সাথে কৌশলের সমন্বয়েই যে কোন কাজে সাফল্য পাওয়া সম্ভব।আজকের পোস্টে আমি সেই নির্দেশনাটিই দেওয়ার চেষ্টা করব।তবে যারা পরিশ্রম করতে পারবেন না বা কোন শর্টকাট ওয়ে খুজেন সফল হওয়ার জন্য তাদেরকে বলি এ পোস্ট আপনার কোন কাজে আসবে না।আপনি এখনি স্কিপ করতে পারেন এবং এখান থেকেই।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ২ ধরনের পরীক্ষার্থী থাকেন, তাহলে দুই ধরনের পরীক্ষার্থীর প্রস্তুতি দুই ধরনের হওয়া উচিত। যেমন সব রোগের জন্য কেবল নাপা খেলে কাজ হবে না; ঠিক একইভাবে সবার প্রস্তুতির স্টাইল একই রকম হলে কাজ না-ও হতে পারে।
১. প্রাথমিকে এ ধরনের পরীক্ষার্থীর একটি হলো- একেবারে নতুন কিংবা আগে পরীক্ষা দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু বইয়ে হাত দেন নি।
২. আরেক ধরনের পরীক্ষার্থী আছেন, যারা এর আগেও পরীক্ষা দিয়েছেন। মানে, অভিজ্ঞ বা কিছুটা অভিজ্ঞ।
এখন প্রথমে আসি যারা একেবারে নতুন অথবা যারা নতুন করে সবকিছু শুরু করতে চাচ্ছেন।তারা কিভাবে প্রস্তুতি শুরু করবেন। যারা এবার প্রথম পরীক্ষা দেবেন, তারা হয়তো বুঝে উঠতে পারছেন না- ঠিক কোথা থেকে কীভাবে #প্রস্তুতি শুরু করবেন ? হয়তো ভাবছেন, আগে তো তেমন কিছু পড়িনি, এখন কি ভালো করা সম্ভব?
#প্রকৃতপক্ষে, হাতে এখনো যে পরিমাণ সময় আছে, পরিকল্পনামাফিক পড়লে, এখনো ভালো করা সম্ভব। তো আসুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে শূন্য থেকে প্রস্তুতি শুরু করবেন—
#ধাপ-১: প্রথমে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার বিগত সালের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে দেখুন এবং পড়ুন। প্রাথমিকে কী ধরনের প্রশ্ন হয় ধারণা পেয়ে যাবেন এবং বিগত সালের প্রশ্ন থেকে অনেক কমনও পাবেন। বিগত সালের প্রশ্নগুলো ব্যাখ্যাসহ পড়ুন। হাতে বেশি সময় না থাকলে অত্যন্ত ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের প্রশ্নসমুহ ব্যাখ্যাসহ পড়ুন। কারণ এগুলো আগের প্রশ্নগুলোর চেয়ে একটু ভিন্ন। ভিন্ন এ কারণে বলছি আগে সাধারণত প্রত্যেকটি বিষয়েরই নির্দিষ্ট কিছু টপিক থেকে #জোড়ায় জোড়ায় প্রশ্ন হত।কিন্তু এখন সেই ধারা অব্যাহত নেই।এখন গড়পড়তা সব টপিকেই আপনাকে হাত দিতে হবে।তবে বিগত সালের প্রশ্ন পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন কোন টপিকগুলোর একেবারেই গভীরে যেতে হবে আর কোন টপিকগুলোর উপর মৌলিক ধারণা রাখলেই চলবে। এর জন্য প্রাইমারি নিয়োগ গাইড থেকে বিগত সালের প্রশ্ন পড়তে পারেন।তাছাড়া আপনার বেসিক যদি ভাল হয় আমি বলব যে কোন একটা জব সলিউশন আগাগোড়া পড়ে নিতে।এতে করে চাকরির পরীক্ষায় কি ধরনের ব্যতিক্রমী প্রশ্ন হয় তার সুস্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাবেন।তবে এতে বেশী সময়ক্ষেপণ করা যাবে না।জাস্ট শুধু ধারণা নেওয়ার জন্য পড়বেন।পরবর্তীতে এগুলো নখদর্পণে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
#ধাপ-২: এ পর্যায়ে আপনি আপনার দূর্বলতা চিহ্নিত করবেন।প্রয়োজনে একটি নোট করে নিবেন যে কোন টপিকগুলোতে আপনি বেশি দূর্বল ।দূর্বলতা চিহ্নিত করে এবার আসবে সেগুলোতে সক্ষমতা অর্জন করার পালা।এজন্য বিষয়ভিত্তিক বই হাতে নিবেন।যেমন
বাংলা,গণিত,ইংরেজি।এ তিনটি বই থেকে আপনি আপনার #বেসিক মজবুত করবেন।এজন্য অধিক দূর্বল টপিকগুলোর জন্য বাজারে প্রচলিত গাইড বইয়ের পাশাপাশি বাংলার জন্য নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ এবং ভাল উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণ ,ইংরেজির জন্য Advanced grammer ,গণিতের জন্য ৫ম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির বোর্ড বই থেকে ডিটেইলস ধারণা নিয়ে টপিকগুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নিবেন।
#ধাপ-৩: এরপর বাজার থেকে যেকোনো ভালো সিরিজের (যেমন এমপিথ্রি/প্রফেসর’স/অ্যাসিওরেন্স/ওরাকল) আলাদা বিষয়ভিত্তিক বই পড়তে হবে। সিলেবাসের সাথে মিল রেখে টপিকগুলো পড়ে ফেলুন। গুরুত্বপূর্ণ টপিক বা অধ্যায়ের ওপর বেশি জোর দিন। বিশেষত যে টপিক বা অধ্যায় থেকে প্রায় প্রতিবার প্রশ্ন আছে, সেই টপিক বা অধ্যায়গুলো।
এখানে বাংলার জন্য আমার কাছে এমপিথ্রি / অগ্রদূত টাই বেস্ট মনে হয়।গণিতের জন্য ”সোহাগ”স ম্যাথ এনালাইসিস” বইটি পড়ুন।কারণ প্রাইমারির উপযোগী করে এখন পর্যন্ত কোন বিষয়ভিত্তিক বই বাজারে নাই।তাই প্রাইমারির জন্য হলে এ গণিত বইটি পড়ুন।অধিক উপকৃত হবেন।ইংরেজির জন্য ও এমপিথ্রি/প্রফেসর;স কমপিটিটিভ এক্সাম বইটি বেস্ট।
#ধাপ-৪: এরপর বিগত সালের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা থেকে যেহেতু অনেক প্রশ্ন রিপিট হয়, সেজন্য জব সলিউশন পড়ুন। এখানে বিগত সালের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার ব্যাখ্যাসহ সমাধান পাবেন। এ ক্ষেত্রে #প্রফেসর’স জব সলিউশন বা ওরাকল জব সলিউশন যেকোনো একটি ফলো করতে পারেন।জব সলিউশন থেকে প্রাইমারি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ প্রশ্ন কমন পাবেন।জব সলিউশন শতভাগ কমপ্লিট করার জন্য আমার জব সলিউশন স্টাডি সংক্রান্ত পোস্টটি দেখতে পারেন অথবা আপনার নিজস্ব পদ্ধতি অবলম্বন করুন যেভাবে আপনি বইটি শতভাগ নিয়ন্ত্রণে নিতে পারবেন বলে মনে করেন।মোদ্দাকথা হল নিজস্ব পদ্ধতিই সবচেয়ে বেশি কার্যকরী।কারণ ব্রেইন এতে অনেক বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
#ধাপ-৫: তারপর বাজার থেকে প্রাইমারির জন্য ভালো মানের একটি বা দুটি মডেল টেস্ট নিয়ে রিয়েল পরীক্ষার মত পরিবেশ তৈরি করে সময় ধরে পরীক্ষা দিন। তারপর দেখুন কোন বিষয়ে কত পান। যে বিষয়ে কম পাবেন, সেই বিষয় ভালোভাবে শেষ করুন, বিষয়টিতে জোর দিন।মডেল টেস্ট দিতে দিতে নিজের দূর্বলতাগুলো আবার ও চিহ্নিত করুন এবং সেগুলোতে আবার নজর দিন যাতে আর কখনো ভুল না হয়।প্রয়োজনে কোন মডেল টেস্ট প্রোগ্রামের সাথে জড়িত থাকতে পারেন।আমার নেওয়া মডেল টেস্টে অংশগ্রহণ করে ও নিজের প্রস্তুতি যাচাই করতে পারেন।
আরও পরামর্শঃ
১. কোন টপিক না বুঝে এড়িয়ে যাবেন না।টপিকটি আগে ভালভাবে বুঝে তারপর ঐ টপিকের উপর আসা বিগত সালের প্রশ্নসমুহ পড়ুন।
২.যেগুলো বারবার পড়ার পরে ও মনে রাখতে পারছেন না সেগুলোর আশা ছেড়ে দিন ।কারণ একটি ভুলে যাওয়া টপিক মনে রাখার চেষ্টা আরো দশটি ভুলতে সহায়তা করে।
৩. সবাই ঐ একটা টপিক ভাল পারে আমাকে ও পারতে হবে এমন মানসিকতা পরিহার করুন।
৪. আপনি যা ভাল বুঝেন তা কিভাবে শতভাগ কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে ভাবুন।
৫. পড়ার অভ্যাস আস্তে আস্তে তৈরি করুন।যেমন প্রথম দিন ২ ঘন্টা পড়লে পরের দিন ২ ঘন্টা ৫ মিনিট পড়ুন।এতে করে আপনার শরীর এবং মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে সয়ে যাবে।
৬. পড়ার সময় আনন্দ এবং তৃপ্তি নিয়ে পড়ুন।এতে করে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা থাকবে না।
৭. কোন জিনিস কনফিউশন করে শিখবেন না।কনফিউশন দুর করার জন্য বিভিন্ন বই দেখুন অথবা নেটে সার্চ দিয়ে কয়েকটা উৎসের তথ্য দেখে কনফিউশন দুর করুন।
৮.যে প্রশ্নগুলো মনে থাকছে না সেগুলোকে মার্কিং করুন এবং শুধু সে প্রশ্নগুলোই একাধারে পড়ুন ভালভাবে না শিখার আগ পর্যন্ত।
৯. জটিল টপিকসমুহ নিয়ে অধিকতর রিসার্চ করার অভ্যাস তৈরি করুন।
১০. অপশনের দিকে না তাকিয়ে শুধু প্রশ্ন দেখে উত্তর করার চেষ্টা করুন।এতে পরীক্ষার হলে কনফিউশন তৈরি হবে না।
⬛ খুব খারাফ লাগে যখন আপনি আপনার প্রয়োজন মিটিয়ে চুপ করে এই সাইট থেকে চলে যান । কেনো আপনি কি পারতেন না একটি মাত্র শেয়ার করতে, পারতেন না কমেন্ট করে একটা ভালো রিভিউ দিতে, এখানেই তো কাজের অগ্রহ হারিয়ে যায় । শুধুমাত্র আপনাদের জন্য এ্যাডমিনেরা এই সাইটে আপনাদের জন্য উপকারে আসে এমন সকল কিছু আপানাদের সাথে শেয়ার করে । আপনি কখন অন্যের উপকারে আসবেন । অনুরোধ করে বলছি এখান থেকে আপনি যদি এতটুকু উপকার পেয়ে থাকেন তবে সেটা শেয়ার করে অন্যদের দেখার সুযোগ করে দিয়েন ।
এবার আসি #অভিজ্ঞদের প্রস্তুতির বিষয়ে। আপনারা যেহেতু এ পর্যন্ত এক বা একাধিক পরীক্ষা দিয়েছেন, আপনাদের বলার তেমন বেশি কিছু নেই। যেহেতু আপনারা অনেক কিছু জানেন বলে ধরে নিলাম। তারপরও কিছু কথা না বললেই নয়—
আপনাদেরকে প্রথমেই ভাবতে হবে ” সেফ_জোন” নিয়ে।অর্থাৎ রিটেনে কত নম্বর পেলে আপনার চাকরি হাতের মুঠোয় আসবে।সেটা এলাকাভেদে ভিন্ন হয় তা আপনারা জেনে বুঝে প্রস্তুতি নিবেন। ভালো মানের মডেল টেস্টগুলোয় কেবল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো থাকে, যেখান থেকে পরীক্ষায় অনেক কমন পাওয়া যায়। সে জন্য আপনি ‘ ভালো মানের মডেল টেস্ট থেকে মডেল টেস্ট দিন এবং দূর্বলতা চিহ্নিত করে পড়ুন।বারবার রিভিশন দিন। তারপর দেখুন কোন বিষয়ে কত পান। যে বিষয়ে কম পাবেন, সে বিষয় ভালোভাবে শেষ করুন, বিষয়টিতে জোর দিন। যেকোনো ভালো সিরিজের বইগুলো পড়ুন এবং বিগত সালের প্রশ্ন মানেই সবাই পারবে এমন মনে করে আপনি ও বিগত সালের প্রশ্নে কোন ছাড় দিবেন না শতভাগ নিয়ন্ত্রণে নিন। সাম্প্রতিক সাধারণ জ্ঞান নিয়ে এত টেনশন করবেন না।আমি মনে করি পড়ারই প্রয়োজন নাই কারণ এতে করে মূল পড়া থেকে অনেকেই বিচ্যুত হন।পড়লে ও এখন পড়ার প্রয়োজন নাই পরীক্ষার কিছুদিন আগে পড়ে নিবেন।
মাথায় রাখতে হবে, এখন প্রাথমিক পরীক্ষায় #প্রতিযোগী ও #প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। তাই আগের মতো গতানুগতিক বই পড়ে কিংবা গতানুগতিক টেকনিক অবলম্বন করে সাফল্য আশা করা যায় না। প্রতিযোগী ও প্রতিযোগিতা দুটিই যেহেতু বেশি, তাই সাফল্য পেতে হলে পড়াশোনা করতে হবে ব্যতিক্রমভাবে ও কার্যকর টেকনিক অবলম্বন করে। এভাবে পড়লে ভালো কিছু হবে। আশাহত হবেন না মনে রাখবেন #একগুচ্ছ চাবির শেষ চাবিটা দিয়ে ও তালা খুলতে পারে।
সময়টুকু ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে আপনার ও আপনার পরিবারের ভাগ্যে অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। তাই সময় নষ্ট না করে বেশি বেশি পড়ুন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বেশি জোর দিন; যেন পরীক্ষার হলে গেলে বিভ্রান্ত না হন।
আরেকটি কথা মনে রাখবেন, পৃথিবীতে কেউ কাউকে সুযোগ করে দেয় না, সুযোগ নিজেকে তৈরি করে নিতে হয় যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে। আপনি ১ ঘণ্টা বেশি পড়া মানে ১ ঘণ্টার পথ এগিয়ে গেলেন সাফল্যের পথে।
বিঃদ্রঃ এছাড়া ও অনেকের ভিন্ন পরামর্শ থাকতে পারে।আমি আমার মত করে পরামর্শ দিলাম ।আপনি আপনার মত করে কাজে লাগাবেন।মোদ্দাকথা হল গন্তব্যস্থলে পৌছানো তা যেভাবেই হোক।
অশেষ ধন্যবাদ সবাইকে
নিরন্তর শুভ কামনা
ও ভালবাসা রইল সবার জন্য
Suhag Talukdar
সহকারী শিক্ষক
ভরপূর্ণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
লাখাই,হবিগঞ্জ।