Agent Banking And Mobile Banking
মোবাইল
ব্যাংকিং এবং এজেন্ট ব্যাংকিং উভয়েই হাতের মুঠোয় ও হাতের কাছে ব্যাংকিং
ব্যবস্থা। তবে দু’ইয়ের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। তত্ত্ব এবং
প্রায়োগিক উভয় দিকেই এই দু’ইয়ের পার্থক্য উল্লেখ করার মত।
মোবাইল ব্যাংকিং –
মোবাইল
ব্যাংকিং হলো এমন এক ব্যাংকিং ব্যবস্থা বা আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়া যা
মোবাইল বা মুঠোফোনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়। মোবাইল ব্যাংকিং হলো হাতের
মুঠোয় ব্যাংকিং। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনুমোদিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের
গ্রাহকরা আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার পদ্ধতিই মূলত মোবাইল ব্যাংকিং।
বাংলাদেশে ২০১০ সালে চালু হওয়া এই সেবায় ২০১৮ পর্যন্ত ২৯টি ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনার অনুমতি নিলেও এখন পর্যন্ত
১৮টি ব্যাংক এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে
মানুষের আর্থিক লেনদেন খুব সহজ হয়ে উঠলেও এর মাধ্যমে জনসাধারণের হয়রানিও
অনেক। অসাধু চক্রের অপতৎপরতা, সাধারণ লোকজনের অসচেতনতা ইত্যাদি কারণে
মোবাইল ব্যাংকিং এর কারণে দিন দিন প্রতারণা বেড়েই চলছে। যদিও পরিচালনা
কোম্পানি থেকে এসব বিষয়ে প্রতিনিয়ত সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণা অব্যাহত
রয়েছে।
এজেন্ট ব্যাংকিং –
এজেন্ট ব্যাংকিং হলো প্রচলিত
ব্যাংকিং ব্যবস্থারই একটি অংশ, তবে এর পরিসর ছোট। এখানে প্রচলিত ব্যাংকিং
সেবার প্রায় সব সেবাই প্রদান করা হয়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে বিষয় হলো-
এখানে ঝুঁকিমুক্ত লেনদেন মানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর মাধ্যমে লেনদেন করা হয়।
গ্রাহকের আর্থিক নিরাপত্তায় এজেন্ট ব্যাংকিং এর ভূমিকা অতুলনীয়। বলা হয়ে
থাকে ব্যাংকিং প্রতারণার অধিকাংশই হয়ে থাকে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে
কিন্তু এজেন্ট ব্যাংকিং এ চেক এর মাধ্যমে উত্তোলন সুবিধা না থাকায় এজেন্ট
ব্যাংকিং প্রচলিত শাখা ব্যাংক গুলো থেকেও অধিক নিরাপদ। এখানে কোন অসাধু
চক্র চাইলেই তাদের হীন চক্রান্ত চরিতার্থ করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক
২০১৩ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম গ্রহণ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত
(মার্চ ২০১৯) ২১টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং এর অনুমোদন নেয় এবং ১৯টি ব্যাংক
বর্তমানে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এখন পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং এর
মাধ্যমে কোন প্রতারণার খবর পাওয়া যায়নি।
তুলনামূলক আলোচনাঃ
মোবাইল ব্যাংকিং জনজীবনকে সহজ করেছে কিন্তু সাথে সাথে এর মাধ্যমে চরমভাবে বেড়েছে হয়রানি। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন অসাধু গ্রুপ আর্থিক প্রতারণা, অবৈধ লেনদেন পরিচালনা করে থাকে। বাংলা ট্রিবিউন এর ‘মার্চ ০২, ২০১৯ইং’ এর অনলাইন সংস্করণে উল্লেখ করা হয়- ১৫ ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের অর্থ লেনদেনে মোবাইল ব্যাংকিং- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য বলছে, অপরাধীরা অর্থ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে মোবাইল ব্যাংকি। ১৫ ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের অর্থ লেনদেনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার চিহ্নিত করা হয়েছে। তথ্য বলছে— মাদক ব্যবসা, মানবপাচার, চোরাচালান, চাঁদাবাজি, হত্যা, অপহরণ, হুন্ডি, জালিয়াতি, জিনের বাদশা, হ্যালো পার্টি, প্রতারণা, মুক্তিপণ আদায়, প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রবাসীদের জিম্মি করে টাকা আদায় ও ধর্মভিত্তিক জঙ্গি কর্মকাণ্ডের মতো অপরাধের ঘটনায় টাকা লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং।এছাড়া এই অবৈধ কার্যক্রমের বেশির ভাগই পরিচালিত হচ্ছে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে।
এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত গ্রাহক
সেবায় যথেষ্ট সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বৈদেশিক অর্থ গ্রহণ,
আভ্যন্তরীণ অর্থ স্থানান্তর, সঞ্চয়, সামাজিক সেবা প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে
এজেন্ট ব্যাংকিং সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া হুন্ডি ব্যবসার
দৌরাত্ম কমানো, সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়ন বন্ধ করাসহ সামগ্রিক বিষয়ে
এজেন্ট ব্যাংকিং সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
এজেন্ট ব্যাংকিং এবং
মোবাইল ব্যাংকিং উভয়ের লক্ষ্য মানুষের দোরগোড়ায় আর্থিক সেবা পৌঁছে
দেয়াসহ মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং
এর তুলনায় এজেন্ট ব্যাংকিং যথেষ্ট সফল। দেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠী থেকে শুরু
করে উচ্চ শিক্ষিত সকলেই মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার
অন্তর্ভুক্ত। এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে মানুষ এখন হাতের কাছেই সব ধরণের
ব্যাংকিং সেবা পেয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের জন্য এখন আর সবাইকে
কষ্ট করে শহরের ব্যাংক শাখায় যেতে হচ্ছে না। দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের
সাথে সাথে এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা
যাচ্ছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে মাঝে মাঝে ভুল তথ্য লক্ষ্য করা যায়। অনেকে এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং-কে একসাথে গুলিয়ে ফেলে। এছাড়া বিভিন্ন এনজিও এবং মাল্টিপারপাস এর সাথে এজেন্ট ব্যাংকিং-কে তুলনা করতে দেখা যায়। মূলত এজেন্ট ব্যাংকিং সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন বিভ্রান্তি তৈরী হয়েছে। তাই এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে আরো সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
আবদুল্লাহ আল নোমান
এক্সিকিউটিভ
এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশন
এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড