What should be thought while meditating ?
ধ্যানের মুখ্য উদ্দেশ্য, মন কে, কেন্দ্রীভূত করা । ধ্যান করতে বসে, ভাবনা বা কল্পনা, মানসিক স্থিতিকে বিক্ষিপ্ত করে তোলে । যাঁরা এসম্পর্কে অভিজ্ঞ, তাঁরা বলেন, ধ্যানের সময় নানাবিধ চিন্তা, কল্পনা, বার বার এসে, মন কে অস্থির করে তোলে এবং মনসংযোগে ব্যাঘাত ঘটিয়ে, ধ্যানের উদ্দেশ্যেকে বিব্রত করে।এজন্য বলা হয়, সমস্ত ভাবনাচিন্তা, কল্পনাকে, দূরে সরিয়ে রাখতে। এবং এই বিক্ষিপ্ত ভাবনা চিন্তাকে মন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে, বলা হয়, ধ্যানের সময়, মনসংযোগ গভীর করার জন্য, নিজের শ্বাস,প্রশ্বাসের দিকে অথবা নিজের নাভিমুলে, মন কে কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করতে।
১) আপনি আর আপনার চিন্তা এক নন। আপনার চিন্তাকে দেখুন দূরের থেকে। ধরা যাক , আপনি একজন ডাক্তারের চেম্বারে অপেক্ষা করছেন আপনার ডাক পড়বার জন্য , সেখানে আরো অনেক অপেক্ষমান রুগী আছেন। কেউ আসছে , দাঁড়াচ্ছে , বসছে , চলে যাচ্ছে কেউবা - এঁরা সবাই অন্য মানুষ , ক্ষণিকের জন্য আপনারা সকলেই একটি ঘরে বসে আছেন , তাইতো ব্যাপারটা?
আপনার মাথার মধ্যে ক্রমাগত ঘুরপাক খাওয়া চিন্তাগুলোও তাই , ওই চিন্তাগুলো আপনি নন , কোনরকম বিচার না করে দেখুন চিন্তা আর অনুভুতিগুলোর আসা যাওয়া। এই একটা রাগের অনুভূতি হলো , রাজনীতি বা খেলাধুলা সম্পর্কিত একটা চিন্তা এলো , আজ রাতে কি খাব বা প্রেম সংক্রান্ত একটা অনুভূতি এলো। এগুলো থামাবার চিন্তা করা বৃথা , কখনো এরা থামবে না , তবে এই চিন্তাগুলো না “করে “, চিন্তাগুলো বা অনুভূতিগুলোকে “দেখুন “।
২) উদ্দেশ্যটা হলো মনটাকে একটু হালকা করা , আলগা করা। আপনার মনটি সবসময় একটি মুষ্টিবদ্ধ হাতের মতো হয়ে থাকে, ধ্যানের মাধ্যমে মনটার মুঠিটা একটু আলগা হবে।নিজেকে সেভাবে দেখুন , যেভাবে আপনার প্রিয় বন্ধুকে আপনি দেখেন। নিজেকে সহজভাবে দোষে-গুণে মেলানো একজন মানুষ হিসেবে নেওয়ার চর্চা শুরু করুন। নিজের প্রতি অতি নির্মম বা কঠোর হবেন না দয়া করে।
৩) নিজের ভেতর হতে থাকা চিন্তা বা দুশ্চিন্তার স্রোতকে খুব বেশী পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই। তবে নিজের অনুভূতিগুলোকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। রাগলে আমার কেমন অনুভূতি হয়, অস্থিরতা শুরু হলে আমার ভেতর কি কি শারীরিক পরিবর্তন হয়? এমনকি আনন্দিত হলে আপনার ভেতর কেমনতর পরিবর্তন হয় , সেগুলো লক্ষ্য করুন।
৪) পঞ্চ ইন্দ্রিয় বিশেষত স্পর্শ দিয়ে যে অনুভূতি আমরা লাভ করি , সেটিতে একটু মনোযোগ দেওয়া শুরু করুন। এই বাসের বা গাড়ির হাতলটা ঠান্ডা, এইযে চেয়ারে বসে আছি গদির উপর, এই গরম চায়ের কাপটা ধরলাম - কেমন এইসব ছোট ছোট অনুভূতিগুলো? সময় নিয়ে, মনোযোগ দিয়ে অনুভূতিগুলো পর্যবেক্ষণ করুন।
৫) দিনের মধ্যে কয়েকবার এক মিনিটের জন্য হলেও মনোযোগটুকু নিয়ে আসুন নিজের শরীরের ভেতরে : কাঁধে কি একটু মৃদু ব্যাথা ? পেটের ভেতর অনুভুতিটা কেমন ? খুব মনোযোগ দিয়ে নিজের নিঃশ্বাসের আসা যাওয়া লক্ষ্য করুন : এই একটা প্রশ্বাস নিলাম , ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস ছাড়লাম। নিঃশ্বাস ছাড়বেন খুব ধীরে ধীরে। খাওয়ার সময় ধীরে , ধীরে , চিবিয়ে চিবিয়ে খান, খাবারের স্বাদ আস্তে আস্তে অনুভব করুন।
ভাবনা,চিন্তা, কল্পনাশূন্য মন যেখানে প্রস্তুত হয়, সেখান থেকেই শুরু হয়, "ধ্যান"।